Saturday, April 15, 2017

CCTV in Hill Area

ভোটের আগে অশান্তি এড়াতে সিসিটিভি বসছে শৈল শহরে

বর্তমান সময়ে অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাসা-বাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে সবাই চিন্তিত! এসবের নিরাপত্তার জন্য আমরা অনেক কিছুই করি। কিন্তু কোন কিছুতেই যেন বিশ্বাস হয় না। আসলেই আপনি কাকে বিশ্বাস করবেন? সিকিউরিটি গার্ড? ড্রাইভার? কাজের লোক? আত্বীয়স্বজন? কারও উপরই আজকাল ভরসা নেই। তাই তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ভরসা রাখতে পারেন বিশ্বস্ত সিকিউরিটি যন্ত্রপাতির উপর। কারণ এরা কখনই আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না কিংবা ডিউটির কথা বলে ঘুমিয়েও থাকবে না।
“নিরাপত্তা” এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ যা আমাদের প্রতিদিন প্রতিটি মুহুর্তেই প্রয়োজন। বর্তমান প্রেক্ষাপট আর  যুগের সাথে পরিবর্তনের অঙ্গিকারে প্রযুক্তির উপহারে আরো উন্নত এবং নিখুত হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আর নিরাপত্তা বাবস্থাকে আরো এক ধাপ নিশ্চিত করে নানান ধরণের সিসিটিভি ক্যামেরা। বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী দুই ধরনের রঙ্গীন সিসিটিভি মনিটরিং সিষ্টেম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ষ্ট্যান্ড এ্যালোন এমবেডেড ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) সম্বলিত সিসিটিভি মনিটরিং সিষ্টেম এবং পিসি বেজড সিসিটিভি মনিটরিং সিষ্টেম। 
সিসিটিভি ক্যামেরা সিষ্টেম এর ব্যবহার আমাদের দেশে দুই-তিন দশক আগে থেকে মোটামোটিভাবে শুরু হলেও পশ্চিমা দেশগুলোতে আরো বহু আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যদিও সিসিটিভি ক্যামেরা সিষ্টেম তখন ছিল শুধু সাদা-কালো, এসব ক্যামেরায় অল্প আলোতেই পরিষ্কার ছবি দেখা যেত। পরবর্তিতে রঙ্গীন ক্যামেরা বাজারে আসলেও স্বচ্ছ ছবির জন্য প্রচুর আলোর প্রয়োজনীয়তার কারনে ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে অনেক কম আলোতেই রঙ্গীন ক্যামেরায় পরিষ্কার ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ফলে এখন আর সাদা-কালো সিসিটিভি ক্যামেরা বা সিষ্টেম উৎপাদন হচ্ছেনা।
দার্জিলিং শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ দমনসহ জেলার বাংলাদেশ ও নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক পাচার, নারী পাচারের মতো অপরাধ রুখতেই প্রশাসন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু করল প্রশাসন৷ দার্জিলিংয়ে পুরসভা নির্বাচনের আগে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় শহরের বিভিন্ন রাস্তায় লাগানো এই সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে জেলার পুলিশ নজরদারি চালাবে। গাড়ির চালকরা আইন ভেঙে গাড়ি চালালে তাদেরকেও এই ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরে আসা ছবি দেখে চিহ্নিত করা যাবে। ইতিমধ্যেই দার্জিলিং শহরসহ সমতলের শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া এবং খড়িবাড়ি ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত নজরদারির জন্য ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে৷
বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী দুই ধরনের রঙ্গীন সিসিটিভি মনিটরিং সিষ্টেম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ষ্ট্যান্ড এ্যালোন এমবেডেড ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) সম্বলিত সিসিটিভি মনিটরিং সিষ্টেম এবং পিসি বেজড সিসিটিভি মনিটরিং সিষ্টেম। ব্যবহারের ভিন্নতার কারনে বর্তমানে রঙ্গীন সিসিটিভি ক্যামেরা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমনঃ সাধারন ক্যামেরা, ডোম ক্যামেরা, হিডেন ক্যামেরা, স্পাই ক্যামেরা, স্পীড ডোম পিটিজেড ক্যামেরা, হিডেন ক্যামেরা, স্পাই ক্যামেরা, ডে-নাইট ক্যামেরা, জুম ক্যামেরা, ভেন্ডাল প্রুফ ক্যামেরা এবং আই পি ক্যামেরা উল্লেখযোগ্য। যারা একটু কম খরচে সিসিটিভি মনিটরিং বা রেকর্ডিং সিষ্টেম চান তাদের জন্য পিসি বেজড সিসিটিভি মনিটরিং এবং রেকর্ডিং সিষ্টেমই ভাল।
দার্জিলিংয়ে জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অফিস থেকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা এবং নজরদারির জন্য লাগানো মনিটরের উদ্বোধন করেন জেলার পুলিশ সুপার অমিত পি জাভালাগি। গোটা শহরে মোট ৪৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা এখনও পর্যন্ত লাগানো হয়েছে। আধুনিক ক্যামেরাগুলির জুম করার যেমন ক্ষমতাও রয়েছে তেমনি এগুলি রাতেও পরিষ্কার ছবি সংগ্রহ করতে পারবে। এতে যেকোনও গাড়ির নম্বর অনায়াসেই ক্যামেরায় ধরা পড়ে যাবে। সমতলের শিলিগুড়ি মহকুমার খড়িবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিভিন্ন জায়গাসহ ভারত-নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কিতেও এই ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলছে। পরবর্তী ধাপে কার্শিয়াংয়ে ক্যামেরা লাগানো হবে। ক্যামেরাগুলি ১৪ দিনের রেকর্ড সংরক্ষিত রাখতে পারবে।
দ্য প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল সিসিটিভি পেজে দেয়া তথ্যানুসারে, বর্তমানে সারা বিশ্বে আড়াই কোটিরও বেশি সিটিটিভি ক্যামেরা চালু রয়েছে। এ ছাড়াও শুধু যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর সিসিটিভি ক্যামেরায় ৪৫ কোটি ডলার খরচ হয়। বাংলাদেশেও ব্যাপক ভাবে বেড়েছে সিসিটিভির ব্যবহার।
ক্যামেরা কেনার সময় আমাদের কিছু বিষয় অবশ্যই জেনে নেয়া দরকার যা আমরা অনেকেই জানি না-

  • এমন একটি ক্যামেরা কিনুন যাতে লাইভ ফিড, texting বা email এর features  থাকবে। এতে করে আপনি আপনার বাসায় কি হছে না হছে সব অফিসে বা যেকোনো জায়গায় থেকে দেখতে পারবেন।
  • Motion-sensor security ক্যামেরা অন্যান্য ক্যামেরা থেকে ভালো কাজ করে।
  • Night vision ক্যামেরাগুলো রাতের বেলা ভালো high-quality images ধারন করে।
  • আপনার বাসার সামনের এবং পিছনের দরজায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগান।
  • দাম একটু বেশি হলেও সবসময় একটি ভালো সিসিটিভি ক্যামেরা কেনার চেষ্টা করুন যাতে আপনি ভালো image quality পান।
জলপাইগুড়ি শহরের পিডাব্লুডি মোড়, রায়কত পাড়ার দিক থেকে দিনবাজার ব্রীজে ওঠার মোড়ে, নেতাজীপাড়া বাস স্ট্যান্ডের মোড় এবং শহরের প্রাণ কেন্দ্র কদমতলা মোড়ে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজে শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে শহরে প্রবেশ মুখ গোশালা মোড় এবং পাহাড়পুর মোড়েও এদিন সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে।


কাজের বরাত পাওয়া বেসরকারি সংস্থার তরফে জানা গিয়েছে, ক্যামেরা লাগানোর জন্য প্রতিটি মোড়ে পাকাপাকি ভাবে লোহার খুঁটি পোতা হয়েছে। প্রতিটি ক্যামেরা অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সম্পন্ন হাই রেজুলেশন ক্যামেরা। অন্ধকারেও খুব ভালো ছবি তুলতে সক্ষম এই ক্যামেরা। ৫০-৮০ মিটার পর্যন্ত স্পষ্ট ছবি তোলার কার্যক্ষমতা রয়েছে ক্যামেরাগুলোতে। রোদ, ঝড়, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ভালো কাজ করবে এই ক্যামেরা। প্রতিটি ক্যামেরাতে দীর্ঘ সময়ের রেকর্ডিং ধরে রাখার মতো স্টোরেড রয়েছে।
এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার অভিতাভ মাইতি বলেন, জেলার ৩৯ টি এলাকায় মোট ৮৯টি ক্যামেরা লাগানো হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪১টি ক্যামেরা লাগানের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বাকি জায়গাগুলোতে ধাপে ধাপে ক্যামেরা লাগানোর কাজে হবে। রাজ্য ট্রাফিক দফতরের বরাদ্দকৃত অর্থে এই কাজ হচ্ছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার।
প্রশাসনিক কর্তারা মনে করছেন, গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগালে একদিকে যেমন চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অসামাজিক কাজকর্ম কমবে। তেমনই অভিযুক্তদের দ্রুত চিহ্নিত করা যাবে৷
সম্প্রতি শহরে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের চুরি, ছিনতাই এমনকি বাইক চুরির মতো ঘটনার পর অভিযুক্তদের ধরতে কালঘাম ছুটে গিয়েছে পুলিশের। সেই সঙ্গে শহরের বুকে দ্রুত গতিতে বাইক চালানোর ফলে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, একদিকে শহরবাসীর নিরাপত্তা অন্যদিকে নিজেদের সমালোচনার হাত থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং শহরে ঢোকার মুখে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন৷ তবে এই উদ্যেগ পুলিশের একার নয়৷জলপাইগুড়ি পুরসভা ও পুলিশ যৌথভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছে৷
সম্প্রতি, পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বোস এবং জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতির মধ্যে বৈঠক হয়৷ সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অন্যান্য আধিকারিকরা এবং সদর ট্রাফিক ওসি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, থানা মোড় এলাকায় এই সিসিটিভি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম করা হবে। তবে আপাতত প্রথম পর্যায়ের কাজে প্রতিটি ক্যামেরা লাগানো লোহার খুঁটিতে একটি লোহার বাক্সের মধ্যে ক্যামেরা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যপ্রযুক্তির সরঞ্জাম রাখা থাকবে। প্রয়োজনে সেখান থেকেই ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারবেন কর্তৃপক্ষ।

No comments:

Post a Comment

Back to Top